সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে হাপিয়ে গেলাম. চারিদিকে সবার মুখে গরম, ঘাম, রোদের তেজ এসব কথা. সত্যি আজকে খুব ভ্যাপসা গরম পড়েছে, দাড়িয়ে দাড়িয়ে ঘেমে যাচ্ছি. এ আর নতুন কি. এও তো কলকাতার এক রূপ. ৩৮ টা গরম তো পেরিয়ে এলাম, এখন আর নতুন করে গরম নিয়ে কি বলবো. ঘরে ঢুকে AC চালিয়ে সকালের না তোলা বিছানায় আবার একটু গড়িয়ে নিলাম. ওই ঘাম গায়েই.
রুমা থাকলে এতক্ষণে আমার ষষ্ঠীপুজো করে ছেড়ে দিতো. কিন্তু আজ আমি স্বাধীন. কেউ কিছু বলার নেই. ৬ বছরের বিবাহিত জীবনে এরকম রবিবার খুব কম এসেছে. বিবাহিত জীবনে মাঝে মাঝে ব্যাচেলর হতে পারাটা ভগবানের এক অমূল্য উপহার. যারা বিবাহিত তারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন. তাই যতটা সংক্ষেপে জীবন যাপন করা যায় তাই করছি. আজকে দুপুরের প্ল্যানিং যেমন এক প্যাকেট বিরিয়ানি. আর রাতে রুটি আর কোনো সবজি কিনে আনা.
রিতমের গরমের ছুটি পড়েছে তাই মার সাথে দিদার বাড়ি গেছে বেড়াতে.
রিতম আমার চার বছরের ছেলে, শহরের নামী স্কুলে পরে. যেন কত চাপ তাই মামার বাড়িতে ঘুরতে গেছে. আরে পাসের গলিতেই তো ওর মামার বাড়ি. আজ্ঞে হ্যা আমাদের লাভ ম্যারেজ.
এগারো বছরের সম্পর্ক. আর রুমা রোজই বাপের বাড়ি যায়. বা আমার সসুর বা শাশুড়ি আমাদের বাড়িতে আসে.
এবার যাওয়াটা একটু স্পেশাল কারণ কয়েকদিন মায়ের কাছে থাকবে. হ্যা সেটা শুধু রাতে মায়ের বাড়িতে ঘুমোবে. আর মনে হলে এ বাড়িতেও একবার ঢু মেরে যাবে. যখন খুসি. আমাকে বোলছিল যে ওদের বারি থেকেই রান্না করে পাঠিয়ে দেবে। কোনরকমে পাস কাটিয়েছি। নাহলে দুপুরবেলাটা আমাকে খেতে দিতে আসার নাম করে এখানেই থেকে যেত। আজ ছেলেও নেই যে বাধা পাবো।
কে রিস্ক ন্যায়, মাথা খারাপ নাকি। আমি বলে দিলাম যে আমার বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছে করছে আজকে। সেও চেপে গেল।
এমন সু্যোগ কি হাতছাড়া করতে আছে। আহা কি মজা যদি রোববারের দুপুরে ভাতঘুম দেওয়া যায়।
স্নান করে এসে ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম। অলস সার্ফিং। গুগুল সার্চ ইঞ্জিনকে ধন্যবাদ। আমার এই অদ্ভুত অদ্ভুত প্রশ্নগুলোকে প্রানপনে খোজার চেষ্টা করে।
যেমন এই মুহূর্তে আমি সার্চ দিলাম। “how to reduce fat of belly by working on treadmill” উত্তর কিন্তু এলো।
তারপর আবার দিলাম “how to workout on treadmill to increase sex power” ভাগ্যিস কম্পিউটার কথা বলতে পারেনা। নাহলে এতক্ষণে আমাকে খিস্তী দিয়ে ভুত ভাগিয়ে দিতো।
এবার খেয়াল হলো যে আমার একটা মেইল বক্স আছে। সেটা খুললাম।
২২৭৬৮ মেইল ৫৬৯ আনরিড।
প্রচুর অভিযোগ সবার, আমি মেইলের উত্তর দিই না।
নাহঃ একটু সামাজিক হতে হবে। সবাইকে কিছুনা কিছু উত্তর দিতে হবে আজ। এই সুযোগ। PR টা তো বজায় রাখতে হবে। ছেলে থাকলে তো ল্যাপটপ নিয়ে বসলেই ঝাপিয়ে পড়তো। সে গেম খেলবে।
স্ক্রল করে নিচে এসে একটা মেইলে চোখ আটকে গেল।
দু বছর আগের একটা মেল পরা হয়নি। Rewind ২ বছর.
থানার বেঞ্চে বসে আছি সঙ্গে আমার শশুর আর শালা. কাল রাত থেকে বিভিন্ন নিউস চ্যানেলে ব্রেকিং নিউস, “কলকাতা এয়ারপোর্টের সিকিউরিটি চেক ইনের সামনে বিখ্যাত শিল্পপতিকে আততায়ীর গুলি, দেহরক্ষী সহ আরো চারজন ঘটনাস্থলে মৃত. CISF এর সাহসী পদক্ষেপে আরো অনেক ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো গেলেও. আততায়ী কে জীবিত ধরা যায়নি. পাল্টা গুলিতে সেও লুটিয়ে পরে” তদন্ত চলছে এই ঘটনার পিছনে আসলে কি?
রুমা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো, কলকাতা পুলিশের সাদা পোশাকের একদল অফিসার আমাকে জেরা করতে এলো. রিতমের তখন দু বছর বয়েস, মায়ের কোলে থাকতে চাইছেনা.
আমার শশুর মশাই তখন নাতিকে দেখতে আমাদের বাড়িতে. উনি লোকাল রাজনীতির সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত তাই স্থানীয় থানার কেকজন অফিসার উনার পরিচিত বেরিয়ে গেল.
রাজনীতি করার সুবাদে উনার রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরের অনেক নেতা মন্ত্রীর সাথে বিশেষ পরিচয় আছে. আমার খেয়াল আছে রুমাদের বাড়ির কালিপূজতে এমন অনেক লোক নিমন্ত্রিত থাকতেন যাদের আজকাল হামেশায় টিভিতে দেখা যায়. এমন একজন ও আছেন যে আমাদের বিয়েতেও এসেছিলেন সে আজ দেশের একটা গুরুত্যপূর্ণ দায়িত্ব প্রাপ্ত.
সেই সুবাদে পুলিশের গাড়ি করে আমাকে থানায় যেতে হলোনা.
কিন্তু অফিসাররা অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পরায় আমাদের বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো.
শেষেমেষে ডাক পরলো প্রায় রাত সাড়ে দশটার সময়.
শশুর মশাই অস্থির হয়ে থানার বাইরে পায়চারী করছেন আর ঘন ঘন কাদের যেন ফোন করছেন. আমিও মোবাইলএ রুমাকে ক্রমাগত আপডেট দিতে থাকলাম.
জেরা শেষ হতে হতে প্রায় রাত দেড়টা বেজে গেলো.
এখন আমার বাড়িতে শাশুড়ি রয়েছে রুমার কাছে, রিতম ঘুমিয়ে পড়েছে রোজের মতো.
যেই মেয়েটিকে আততায়ী বলে চিন্হিত করা হয়েছে তার মোবাইল থেকে আমার সাথে অনেকক্ষণ কথা হতো. কারণ কি? কি ভাবে তার সাথে আমার পরিচয়.
এতক্ষণ ওই বোবা কালা, সমাজ রক্ষকদের সামলাতে আমার কাল ঘাম ছুটে গেলো. এক কথা বার বার করে জিজ্ঞেস করে চললো ওরা.
সত্যি যারা অপরাধী তাদের জন্যে মায়া হয়. এদের সামলে কি করে ওরা. একজন তো জিজ্ঞেস করে বসলো আমার পাকিস্তানে কোনো চেনাশোনা আছে কিনা. একটু কম বয়েসী অফিসার সদ্য পাস করে হয়ত চাকরি পেয়েছে. লালবাজারের এক অফিসার প্রায় হেসে দেয় দেয়. হাসি চাপতে বাইরে উঠে গিয়ে ধুমপান করতে শুরু করলো.
অবশেষে আমি ছার পেলাম এই শর্তে যে যখন দরকার পরবে আমি সহযোগিতা করবো.
আর আমার শশুর মশাইয়ের লম্বা হাত দেখে পুলিশ কথা দিল যে রাত বিরেতে ডাকবেনা আর যখন দরকার হবে আসার জন্যে সময়টুকু দেবে.
নিচ থেকেই দেখতে পেলাম যে ফ্লাটের সব এল জলছে. সত্যি তো এরকম হলে কারো ঘুম আসে.
আমি হলাম শিল্পী মানুষ, এরকম ঘটনায় জড়িয়ে পরবো, তা আমার ঘরের লোক কি ভাবে জানবে. শশুর শাশুরিও বা কি ভাবছে কি জানে. হয়ত এই যাত্রা ঝামেলা মিটলে মেয়েকে নিয়ে চলেই যাবে. চুপি চুপি অন্য কোনো মেয়ের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলা, কোন শশুর শাশুড়ি সহ্য করবে বলুন.বেল বাজাতে শাশুড়ি এসে দরজা খুলে দিলেন, আমাকে দেখে বললেন কিছু মুখে তুলছে না, তুমি এসেছ নাও অল্প কিছু খেয়ে নাও, নাহলে শরীর খারাপ করে যাবে. একেই বলে মায়ের মন. আমি বেড রুমে ঢুকে রুমাকে ডাকতে যাবো তো একটু থমকে গেলাম, খুব ইমোশনাল মেয়ে. অন্য সময় বিরক্ত লাগলেও আজকে শশুর বাড়ি কাছাকাছি হওয়ার সুবিধে বুঝতে পারলাম. তার ওপর শশুর মশাইয়ের দৌলতে আজ পুলিশ আমার প্রায় চুলও ছুটে পারলোনা.
গুমরে গুমরে কাঁদছে রুমা, রিতম কে জড়িয়ে ধরে. আমি গিয়ে ওর পিঠে হাত রাখলাম. আরো যেন বার্স্ট করলো.
রুমা! আসতে করে ওকে ডাকলাম, কোনো সারা নেই আরো কেঁদে চলেছে.
আচ্ছা এই ভাবে কাঁদলে কি তোমার সমস্যার সমাধান হবে? আমি জানি তুমি কোন প্রশ্নের মধ্যে আছো. সেই উত্তর তো তোমাকে আমিই দিতে পারি, আর আমি তোমাকে প্রমানও দিতে পারি, যে আমি নির্দোষ. তোমার কাছেও আর সমাজের কাছেও. থানা পুলিশ এগুলো হয়ত এড়াতে পারবোনা, লোকজন হয়ত আমাকে খারাপ ভাববে, কিন্তু আমি তোমার কাছে পরিষ্কার থাকতে চাই. আমার মনে কোনো পাপ নেই, আর আমি তোমাকে যা বলব আমার সাফাইয়ে তার সপক্ষে অনেক প্রমান আছে.
ভারী একটা পায়ের শব্দ, বুঝলাম এবার শাশুড়ি আসছে, মা রে ওঠ এবার তুই আর সুজিত কিছু খেয়ে নে, অনেক রাত হয়ে গেছে আরেকটু পরে ভোর হয়ে যাবে, আয় আয় আমি খাবার গরম করছি.
বাইরে থেকে বলে চলে গেলেন, আমি রুমার পিঠে হাত দিয়ে ওকে ডাকলাম. শুনলে তো এবার ওঠো. কথা বলার জন্যে সারারাত পরে আছে. এরপর মা কিন্তু অসুস্থ হয়ে পরবে এত রাত জেগে আছে. আজ নিশ্চয়ই ওষুধ পরেনি পেটে.
রুমা উঠে দাড়িয়ে গটগট করে হেটে চলে গেলো আমার সাথে কোনো কথা বলল না. আমিও চেঞ্জ করে টয়লেটএ ঢুকে একটু ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলএ গিয়ে বসলাম.
মনটা ভিষণ ভারী লাগছে,
একদিকে রুমা একদিকে এই ঘটনা.
শান্তি মতো একটু চিন্তাও করতে পারছিনা, যে কি করবো কি হবে, আর কি হয়ে গেলো.
খেতে খেতেও রুমা কোনো কথা বলল না. মুখটা এমন যেন গুলিগুলো আমিই চালিয়েছি.
ওর মা মাঝে মাঝে ইটা ওটা নিতে অনুরোধ করছিলো. খাওয়ার কি আর গলা দিয়ে নাম নাকি এখন. কিন্তু খাবোনা বললে আরো দুজন না খেয়ে বসে থাকবে. আর খেতে বসলেও ভাববে বাবা কি ঠান্ডা মাথার রে এত কান্ড হলো আর চুপচাপ বসে সাটিয়ে যাচ্ছে. তাই দু পক্ষকে মানাগে করার জন্যে নাম মাত্র একটু খেয়ে উঠে গেলাম.
AC টা আরো ঠান্ডায় করে দিলাম. আর রিতমের পাসে শুয়ে ওর মাথার কোকড়ানো চুলে হাত বুলিয়ে দিছিলাম তখন রুমা এসে ঢুকলো ঘরে.
এত ঠান্ডা করে দিলে যে, ছেলেটার তো ঠান্ডা লেগে যাবে.
একটু দাড়াও দশ মিনিট পরে আবার নরমালে দিয়ে দেবো.
চুপ চাপ লাইট নিভিয়ে রিতমের আরেক পাসে শুয়ে পরলো.
আমি রুমার মাথায় হাত দিলাম. নিরোত্তর রইলো সে.
আমি জানি সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া তাই ধীরে ধীরে নিজের জায়গাটা বানাতে চেষ্টা করলাম.
তুমি আমাকে ভুল বুঝোনা. আমি কোনো অন্যায় করিনি, হ্যা তুমি বলতে পর এই এত ঘটনা আমি তোমাকে বলিনি কেন? আমি তো তোমাকে চিনি রুমা, তুমি কি মেনে নিতে পারতে যে একটা মেয়ে দিনের পর দিন ঘন্টার পর ঘন্টা আমার সাথে ফোনে কথা বলে চলেছে. হ্যা তুমি ঠিকই বলতে, এত কল আমার বিসনেস রিলেটেড না. যেসব কল তোমাকে একটু আড়াল করে কথা বলতাম সেগুলো ওই করতো.অনেকক্ষন পরে আমি আর রুমা একটা সমঝোতায় এলাম যে একটু ভিড় ফাকা হোক তারপর আমি ওকে প্রমান সহ সব বুঝিয়ে বলবো। সারাদিনের ক্লান্তি ওকে ছেকে ধরেছে, বহুক্ষণ পরে একটু আস্বস্ত মনে হলো. আসতে আসতে রুমা ঘুমের কলে ঢোলে পড়লো.
আমি রিতমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম, ঘুমিয়ে থাকলে কে বলবে যে সারাদিন এত দাপাদাপি করে বেড়ায়.
কাল রাতের পর এই প্রথম একটু নিজেকে একা করে পেলাম।
ক্লান্ত শরীর আর মন, একটু একাকিত্ব খুজছিলো.
মনের ভিতরটা গুমরে ছিলো. যেন একদলা কান্না গলার কাছে আটকে আছে. কাঁদব? পুরুষ মানুষের কি কান্না মানায়? কিন্তু খুব কষ্ট হচ্ছে একটা.
মাথার মধ্যে বার বার টিভিতে দেখানো অনুর মুখটা ঘুরে বেড়াচ্ছে, কত তো ঘটনা ঘটে, এত ভালো করে কোথায় দেখি. কিন্তু ভালো করে দেখে বুঝলাম এত রক্ত হিন্দি সিনেমা ছাড়া আর কথাও দেখিনি এর আগে. আর চেনা একটা মেয়ে রক্তে ভিজে মৃত পরে রয়েছে, এটা ভাবতেই বুকটা মুচড়ে উঠছে.মনের মধ্যে হাজার দৃশ্য ঘুরে বেড়াচ্ছে, মুহুর্তে মুহুর্তে তা পরিবর্তন হচ্ছে.
একটা নববধূ রুপে সাজা সুন্দরী মেয়ের আজ ফুলসজ্জা।
দারুন করে সাজিয়েছে নিজেকে, আজকে তার পুরুষ এক টল, টাফ, হ্যাণ্ডসাম, ম্যাচো মহিলাদের পরম প্রিয় পুরুষ।
আস্তে আস্তে সেই পুরুষ এসে তার শরিরে প্রবেশ করলো, রন্ধ্রে রন্ধ্রে সুখের আগুন ধরিয়ে দিয়ে সেই আগুন জলতে জলতে নিজেদের ভালবাসা প্রকাশ করছে। কঠীন আলিঙ্গনে তাকে আটকে রেখেছে মেয়েটি। দুজনের ঠোঁটে ঠোঁট ঘসে যাচ্ছে, চোখে চোখ আটকে যাচ্ছে, যেন নতুন করে দুজন দুজনকে আবিষ্কার করলো, অনেক প্রতিক্ষার পর যেন এই পাওয়া. ধীর লয়ে শরীর চলছে পুরুষটির, আজ যেন কোনো তাড়াহুড়ো নেই. মন ভরে ভালবাসার দিন আজকে. সময়ের সাথে দুজনের আগুন নিভলো। এখন শুধু মোমবাতির মতন স্নিগ্ধ ভালবাসা তাদের চোখে। মেয়েটা বলে উঠলো “মরনরে তুহু মম শ্যাম সম”। ছেলেটা মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে উঠলো। বলে উঠল বাঁচবো বাঁচবো আমি আর তুই দুজনেই বাঁচবো।
কি করে রাজ? তুই জানিস না এই শরিরে কি আছে। AIDS নিয়ে কে বেচেছে বলতো। আজ থেকে তোরও শেষের শুরু.
নাহ একটা সিগেরেট খাই. ঘুম আসছেনা.
বেডরুম লাগোয়া বেলকনিতে গিয়ে প্যাকেট থেকে একটা গোল্ডফ্লেক মাইল্ড বের করলাম.
“সিগেরেট নহ তুমি শ্বেতপরি”. জোরালো একটা টান দিয়ে খুব সামান্যই বের হলো বুকের ভিতর থেকে. অনু, অনু, অনুসূয়া রায়. তুই নেই, কিন্তু ভিষণ ভাবে আছিস.
সত্যি মনে হচ্ছে একটু কাঁদতে পারলে হালকা হতে পারতাম. ওকেতো আমি ওর থেকে ভালো করে চিনতাম.
পাসের বাড়ির ছেলেটার মনে হয় অফিস টুর আছে. ঘরের লাইট গুলো জলছে. ওদের নিচের দরজায় আওয়াজ হলো.
দাদা কি ব্যাপার ঘুমোন নি.
আমি কোনো উত্তর দিলাম না.
খুব ঝামেলায় পড়লেন না. সত্যি আজকাল মোবাইল এত বিপদজনক হয়ে গেছে, যার তার সাথে কথা বলা খুব রিস্কি.
আমি একগাল ধোয়া ছেড়ে ওকে বোললাম, কোথায় যাচ্ছো?
আসানসোল.
ওর মা সুগার, প্রেসার, কোলেস্টরেল আরো কি কি ব্যামো তে ভুগছে, ছেলের সাথেই আজ প্রাতভ্রমনের প্লানিং , তাই সেজে গুজে একেবারে বেরিয়েছে. আমার সাথে কথা বলতে দেখে, খুব উত্তেজিত বলে মনে হলো উনাকে.
সুজিত, বাবা কি ঝামেলা বলতো, ওর বাবা আর আমি তো কত রাত জেগে আছি, তুমি থানা থেকে ফিরছোনা দেখে. তোমার শাশুড়িকে দেখলাম বাড়িতে. সব মিটে যাক একদিন এসে সব শুনে যাবো, জানোতো নানা লোকে নানা কথা বলে. আর কোনো দরকার হলে খবর দিও. ওর বাবা তো কালকেই ওর এক পুলিশ বন্ধুকে ফোন করেছে, বলেছে যে তুমি এরকম ছেলেই না.
চিন্তা করুন, এদের কত দরদ. আসলে কিছুনা আজ বাজারের চায়ের দোকান এই ঘটনা নিয়ে গরম থাকবে, আর আমি এদের পাসের বাড়ি থাকি, আর সকল বেলায় আমার সাথে কথা হয়েছে সেটা তো সবাইকে বলে একটু দাম বাড়াতে হবে.
খুব বিরক্ত লাগছিল, আর ভয় লাগছিল যে রুমা না উঠে পরে এদের গলা শুনে.
আমি বিরক্তি নিয়েই বোললাম. যা হওয়ার তাই হবে আপনারা শুধু শুধু চাপ নিচ্ছেন কেন?
যাও ভাই দেরী কোরনা, সকালবেলা ট্যাক্সি পাওয়া যায়না সব সময়.
আমার বিরক্তি বুঝতে পেরে হুশ করে বড় রাস্তার দিকে হাটা দিল দুজনধীরে ধীরে আকাশ ফর্সা হয়ে এলো. পাঁচটা বাজতে যাচ্ছে, রুমার মা উঠে পরে তারাতারি, যাই বিছানায় গিয়ে শুয়ে থাকি, আমি জেগে আছি টের পেলে শত শত প্রশ্ন উঠবে.
কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি টের পায়নি ঘুম ভাঙ্গলো মোবাইল এর কাঁপুনিতে. অচেনা নম্বর.
হ্যালো.
হ্যালো মি: সুজিত চক্রবর্তী.
হ্যা.
আমি দৈনিক পত্রিকা জনগণ থেকে বলছি অরুনাভ বিশ্বাস. আপনার সাথে কি দেখা করতে পারি একটু সকালের দিকে. আসলে আমি আপনার বাড়ির কাছেই থাকি, তো ভাবছিলাম অফিস এ ঢোকার আগে ইন্টারভিউটা সেরে ফেললে, ভালো হোত.
আপনাকে কে বললো আমি ইন্টারভিউ দেব? আমার চিত্কারে রুমা জেগে গেল.
সকাল বেলা ডিস্টার্ব করেন কেন এই ভাবে?
রুমা আতঙ্কিত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো.
কি হলো কে ফোনে করেছে.
প্রেস, ফোনটা সুইচ অফ করে বোললাম.
রুমা বুঝতেই পারল যে এই একটা নতুন উপদ্রব শুরু হতে চলেছে, মুখটা শুকিয়ে গেল ওর. আহারে বেচারী আমার জন্যে এদের কি ভোগান্তি.
আটটা বাজে সদ্য এক কাপ চা নিয়ে বসেছি. রুমার মোবাইল এ ওর বাবার ফোন.
কিরে সুজিত ফোন বন্ধ করে রেখেছে কেন?
কেন কি হয়েছে?
থানা থেকে আমাকে যোগাযোগ করছে যে ওর ফোন সুইচ অফ.
রুমা আমাকে বলতেই আমি আবার ফোনটা চালু করে দিলাম.
কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার ফোন লোকাল থানা থেকে ফোন এলো. ভাগ্য ভালো বাড়িতে ল্যান্ডলাইন নেই না হলে এতক্ষণে তো বুঝতেই পারছি.
হ্যালো সুজিত বাবু?
হ্যা বলুন.
আচ্ছা শুনুন, আপনার কেসটা আনঅফিসিয়ালি CBI দেখবে. সেন্ট্রাল থেকে সেরকম অর্ডার আছে, যদিও ফর্মালিটিস যা কিনা রাজ্য আর কেন্দ্রর মধ্যে হয়, সেটা পরে রেগুলারায়জ হবে,
তো CBI কলকাতার সল্ট লেক থেকে একজন সিনিয়র অফিসার আমাদের এখানে এসেছেন. উনি আপনার সাথে একটু কথা বলতে চান.
হ্যা দিন.
মি: চক্রবর্তী (ভিষণ মোলায়েম সেই গলা)
হ্যা বলুন স্যার.
একটু কথা বলা যেতে পারে আজকে?
হ্যা হ্যা সিওর.
তো আপনাকে থানায় আসতে হবেনা আমি যদি আপনার বাড়িতে আসি কোনো আপত্তি আছে?
না সেরকম ভাবে না, তবে বাচ্চা আছে তো ঘরে…..
না না সেরকম কিছু ভাববেন না, এটা একটা ফর্মাল ইন্ট্রোডাকশান শুধু.
ঠিক আছে কখন বলুন.
এই আমি ধরুন এখন বেরোচ্ছি, পৌছুতে যতক্ষণ লাগে.ফোনটা কেটে আমি অসহায় ভাবে রুমার দিকে তাকালাম.
রুমা আমার পাশেই ছিল মোটামুটি ও পুরো কথোপকথন শুনেই বুঝেছে যে কেউ আসবে.
ও ওর মাকে বললো, মা তুমি রিতম কে নিয়ে বাড়ি চলে যাও, একজন আসবেন পুলিশ থেকে.
তোর বাবাকে বলেছিস?
না না মা বাবাকে বিরক্ত করতে হবেনা, আমি ঠিক সামলে নেব, আমি বোললাম.
দেখো বাবা, রুমা তুই কোনো কিছু অন্য রকম দেখলে বাবাকে বা আমাকে ফোন করিস মা.
ঠিক আছে মা তুমি তারাতারি কর. ভদ্রলোক এসে পরবেন.
শাশুড়ি রিতমকে নিয়ে বেরিয়ে যেতেই রুমা আমার দিকে ঘুরে তাকালো. মনে মনে এমন ভাব যেন নাও এবার বলো.
ভাগ্য ভালো আমার, প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কলিং বেল বেজে উঠলো.
আমি উঠে গেলাম দরজা, খুলতে.
সুদর্শন এক যুবক আমারই বয়েসী, চোখে দামী রোদ চশমা, ব্র্যান্ডেড জামা, জুতো, প্যান্ট, ঘড়ি. চুলগুলো কদমছাট দেওয়া, যেটা ওর চেহারার সাথে ভিষণ মানিয়েছে.
মি: চক্রবর্তী?
আপনি?
CBI থেকে অরূপ রায়.
ও আসুন আসুন.
আসা করি আপনাদের কোনোরকম বিরক্তির কারণ হলাম না, ঘরে ঢুকতে ঢুকতে রুমাকে দেখে উনি বললেন.
আমার কেমন যেন এই ভদ্রলোককে বেশ চেনা চেনা লাগছে, কথায় যেন দেখেছি. মনটা বেশ খুজলি করছে, যেমন কোনো কথা পেটে আসছে মুখে আসছে না এরকম হলে.
ম্যাডাম, কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?
না না আপনি বলুন না, আমি অন্য ঘরে চলে যাব কি?
সেটা আপনার ইচ্ছে. আমি বলবোনা যেতে, আপনি এখানেই বসতে পারেন, কিন্তু আমার কথাটা অন্য ছিলো.
ওহ: সরি বলুন প্লিজ.
একটু যদি চা পাওয়া যায়.
এ বাবা এভাবে বলছেন কেন? আমিতো যেতামই চা করতে.
আরে আমার কথা শেষ হয়নি এখনো, বলছিলাম যদি একটু চা করে রাখেন তাহলে মাঝে মাঝেই একটু খেতে পারতাম, অবশ্যই আপনি কিছু মনে না করলে, একেবারে করে রাখুন আর মাইক্রোওভেনে গরম করে দিলেই হবে.
আসলে আমার একটু চায়ের নেশা আছে. সরি আপনাকে একটু বিব্রত করলাম বলে.
আরে না না এরকম ভাবছেন কেন, আমি করে দিচ্ছি, আমরাও বেশ ভালই চা খাই.
ধন্যবাদ মেডাম.
তো মি: সুজিত চক্রবর্তী
হ্যা বলুন.
ভনিতা না করে শুরু করা যাক.
হ্যা, কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন আছে,
বলে ফেলুন?
আপনাকে খুব চেনা চেনা লাগছে, কথায় দেখেছি বলুনতো?
সেটা আমি কি করে বলি বলুন, হিত রাস্তা ঘটে কোথাও দেখা হয়েছে, পৃথিবী তো গোল.
তো আপনি এই মেয়েটিকে কবে থেকে চেনেন?
চিনি মানে পরিচিত, তা প্রায় ১৫ বছর হবে.
১৫ বছর?
হ্যা প্রথম বছর পনের আগেই দেখেছি.
কোথায়?
আসলে কলেজ শেষ করে চাকরি বাকরি না পেয়ে, কিছু সেলস প্রোমোর কাজ করতাম, তো ও আর আমি একসাথেই ছিলাম একই এজেন্সিতে.
ও তারপর আপনাদের ঘনিষ্ঠতা হলো কি ভাবে?
ঘনিষ্ঠতা?
মানে একটা মেয়ে আপনার সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলছে তো ধরতে হবে আপনারা ঘনিষ্ঠই ছিলেন.
না সেরকম না তবে বন্ধু বান্ধব তো কথা বলতেই পারে.
মেয়েটির কল লিস্ট বলছে এই ঘটনার তিন চার দিন আগে আপনার সাথে ওর ঘন ঘন কথা হয়েছে, আর অনেকক্ষণ ধরে. আপনি দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না নিশ্চয়ই.
এর মধ্যে রুমা চা নিয়ে ঢুকলো.
মেডাম আপনি ইচ্ছে করলে বসতে পারেন এখানে. রুমা একটা সোফাতে গিয়ে বসলো.
চায়ের কাপ তুলে নিয়ে চুমুক দিয়ে বললেন, তো এরকম ঘটনা ঘটাবে কিছু বলেনি আপনাকে?
না.
মানে কোনো ফ্রাসটেশন বা, মানসিক কোনো প্রস্তুতি বুঝতে পেরেছিলেন?
না.
কোনো কিছু না?
না, আমি জানি ওর বিয়ে ছিলো এই ঘটনার আগের আগের দিন.
আপনাকে নিমন্ত্রণ করেনি?
না.
(রুমার দিকে ঘুরে) আপনার হাসব্যান্ডের এত ভালো বন্ধু আপনি চিনতেন না.
না.
সেকি মি: চক্রবর্তী আপনি বলেননি?
না. আমার ধারণা, রুমা এটা মেনে নিতে পারতনা তাই বলিনি. রুমার মুখটা দেখে মনে হলো কেউ ওকে বলছে যে আমাকে কোনো মেয়ের সাথে কোনো হোটেলের রুম থেকে বেরোতে দেখেছে.
তো এত ভালো বন্ধু আপনার আপনি বিন্দুমাত্র হিন্টস পাননি এত বড় ঘটনার?
না.
স্ট্রেঞ্জ! বলে চায়ের কাপটা সামনের টেবিল এ নামিয়ে রাখলো.
আপনি সিসিটিভি কাভারেজ দেখেছেন.
না.
এই দেখুন. আর বলুন. একটা আই-পডএ একটা ক্লিপ চালিয়ে দিল. রুমাও উঠে এলো দেখতে.
প্রচুর লোক লাইন দিয়ে দাড়িয়ে,
একটা সুন্দরী মেয়ে কাধে একটা ভারী ব্যাগ নিয়ে, লোকজনকে কি যেন বলছে আর সবাই তাকে ছেড়ে দিচ্ছে এগিয়ে যেতে, আসতে আসতে একটা সুদর্শন লোককে দেখা গেল. আসে পাশে কালো পোশাক পড়া বেশ কিছু লোক. মেয়াটা সেই বৃত্তের মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করলো আর কিছু অনুরোধ করলো, সব লোকজন মেয়েটাকে দেখছে, কালো পোশাকের লোকজন ওকে আগে যেতে দিচ্ছেনা, মেয়েটা বাধ্য হয়ে ব্যাগটা কাঁধ থেকে নামিয়ে দাড়ালো, এবার লাইন যেমন চলছে সেরকম সেও চলছে, এবার লাইন টা একটা পাক খেয়ে সেই সুদর্শন লোকটা আর মেয়েটা মুখোমুখি হয়ে গেল. মেয়েটা সামনে ঝুকলো আর ব্যাগ থেকে একটা ছোট কি বের করে লোকটার দিকে তাক করলো, আর কি সব বলল, তারপর এলোপাথারি গুলি চালাতে শুরু করলো, ওটা একটা পিস্তল সেটা বোঝা যাচ্ছে.
আশেপাশের অনেক লোক শুয়ে পড়ল দেখলাম, বেপরোয়া গুলি চালাচ্ছে,
হটাত মেয়েটা নিজে শুয়ে পরলো, উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করলো আবার শুয়ে পরলো. আর উঠলনা.
ধীরে ধীরে মেয়েটার দেহর সামনে খাঁকি পোশাক পড়া বন্দুক ধারী রক্ষীর দল চলে এলো. ঘিরে নিল জায়গাটা.
অনু হ্যা এটা অনুই.
আমি চুপ করে রইলাম.
এই ভাবে কাউকে মরে যেতে দেখিনি কোনদিন.
রুমা চোখ বড় বড় করে মুখে হাত চাপা দিলো.
কি দেখলেন?
আমি বললাম অনু হ্যা এই অনু.
এই আপনাকে ফোন করেছিলো তো?
হ্যা.
এবার বলুন তো এটা কেউ বিশ্বাস করবে যে মেয়ে ঠান্ডা মাথায় এত বড় ক্রাইম করতে পারে সে যার সাথে ফোন করে এত বলছে সে কিছু জানেনা?
আমি কিছু জানলে ওকে আটকাতাম.
মানে সেই অধিকার আপনার ছিলো?
হ্যা মানে বন্ধু হিসেবে তো ছিলই?
মানে আর কিছু না স্রেফ বন্ধু?
মানে?
বলছি স্রেফ বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিলো?
কি বলতে চাইছেন আপনি? রুমাও আমার গলার টোন শুনে ঘাবড়ে গেল একটু.
বলছি আর কিছু করার কি এলেম ছিলো আপনার?
কি যা তা বলছেন?
ঠিক ই তো বলছি? মেডামও তো আপনার জন্যে কতদিন অপেক্ষা করেছিল, আপনি কতদিন পরে গিয়ে প্রপোজ করেন?
আমি অবাক হয়ে গেলাম? এত খবর নিয়ে নিয়েছে?
মানে? আমি আমতা আমতা করে বললাম, রুমাও বেশ ঘাবড়েই গেল.
মানে হলো যে আপনি যেই গান্ডু ছিলেন সেই গান্ডুই আছেন?
আমি খুব ঘাবড়ে গেলাম, রুমা বুঝলাম ফোনটা হাতড়াচ্ছে.
দেখুন আপনার কিন্তু কোনো রাইট নেই আমার সাথে এই ভাবে কথা বলার.
আলবাত আছে. আপনি কেন আমাকে আপনার বিয়েতে বলেননি?
কে বলুন তো আপনি?
এই যে একটু আগে বললাম যে আপনি যেই গান্ডু ছিলেন সেই গান্ডুই আছেন? এখন আরো বেশি গান্ডু হয়ে গেছেন.
আপনি আমাকে চেনেন?
আপনি আমাকে চেনেন?
আরে শালা বোকাচোদা, সরি বৌদি কিছু মনে করবেননা, আপনার বরটা চিরকালই এরকম.
কিরে শালা এখনো চিনতে পারছিস না তো?
বললাম তো চেনা চেনা লাগছে.
আমি অরূপ রে গান্ডু গোলকিপার.
ওহ: শালা, তুই বোকাচোদা CBI
কেনরে আমি CBI অফিসার হতে পারিনা.
রুমাকে ভিষণ relaxed লাগছে এখন.
আরে আমার ঘাড়েই কেস টা পড়েছে.আর তোর নামটা দেখে আর লোকেশন দেখে আমার সন্দেহ হয়েছিল যে এ মাল তুই.
শালা দেখা হলো তো হলো এইভাবে?
তুই আগে বল বিয়েতে এলিনা কেন?
আরে সেই সময় অনেকগুলো চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছিলাম, তোরাতো ততদিনে সেটেল হয়ে গেছিস, আমিতো জানিস বাবা মারা যাওয়ার পরে ওই FCI এর রাজ্য সরকারী একটা চাকরি করছিলাম, যেটা আমার বিলকুল না পসন্দ ছিলো. তাই সেই সময় থেকে পুরো সরিয়ে নিয়েছিলাম নিজেকে. তারপর এই চাকরি পেলাম, এটাও এমন যে সামাজিক জীবন বলে কিছু নেই.
যাই হোক আজ বেশি সময় নেই আমাকে গিয়ে রিপোর্ট তৈরী করতে হবে যেটা মিনিস্ট্রিতে যাবে.
তুই শালা কি করে নিজেকে এই কেস এ ফাসালি বলতো?
আরে আমি কি করে বলব যে ও এরকম করবে?
কি ব্যাপার বলতো কিছু তো আছেই, তুই শালা নিজের বউকে মেয়েটার কথা বলিসনি এতদিন.
রুমা এবার মুখ খুললো, অনেক নিশ্চিন্ত যেন, যদি তদন্তকারী অফিসার আসামির বন্ধু হয় তো আনন্দই হওয়ার কথা.
দাদা এই নিয়ে আমার সাথে কাল রাত থেকে চলছে, আপনি বলুন কোনো মেয়ে এরকম সহ্য করতে পারে. থানা পুলিশ, এরপর CBI . বাড়িতে দু বছরের বাচ্চা আমাদের ওর ওপর কি রকম প্রভাব পড়তে পারে বলুন.
একটা কথা বলি, আমাকে দাদা বললে কিন্তু আমি CBI অফিসার হিসেবে কাজ করবো, আর যদি অরূপ আর তুই বলে ডাকিস তাহলে আমি অরুপের মতো ব্যবহার করবো.
ওহ সরি সরি,
আরে না বৌদি, এত চিন্তা করবেন না, আমি জানি ওর এলেম নেই, ওকে তো আজ থেকে চিনিনা, বেস্ট প্লেয়ার এর ট্রফি হাতে নিয়ে নামছে, মেয়েদের মধ্যে শোরগোল কে ওকে প্রপোজ করবে, ওর ব্যাটা কোনদিকে খেয়াল নেই আপনাকে টাইম দেওয়া আছে তো.
রুমা শুনে একটু লজ্জা পেল.
কই আপনাকে কোনদিন দেখিনি তো.
দেখবেন কি করে আমার তো অনেক এপয়েন্টমেন্ট থাকত. বলে হো হো করে হেসে উঠলো.
আমরা সবাই হেসে উঠলাম.
সত্যি তুই যা ফাট মারতিস তখন, আমরা তো চুনোপুটি তোর কাছে তখন. বাইকের পিছনে নিত্য নতুন সঙ্গিনী.
নিত্য নতুন সঙ্গিনী আর এক কথায় দু কথায় তোর কথা বলে, এতটা ছুপে রুস্তম ছিলো. মেয়েদের মনে উনি অধিষ্ঠান করতেন, আর আমি বাইকের তেল পুড়িয়ে মেয়েগুলোকে ঘুরতে নিয়ে যেতাম ওর গল্প শোনার জন্যে. কি কপাল.
যাই হোক, এখন ছার আজ ভিষণ তাড়া আছে.
শোন পরে তোর থেকে ডিটেলস এ শুনবো. আজ আমাকে রিপোর্ট করতে হবে, তোকে যে জেরা করেছি, সেটার প্রমান হিসেবে একটা কাগজে সই করে দে. ভি নেই তোকে ফাসাবো না.
আমি একটু আমতা আমতা করছি দেখে অরূপ বললো, আরে তোর কোনো ভয় নেই রে. সই কর, নাহলে এখন আমাকে গল্প করার খেসারত দিতে হবে. শোন আমি লিখবো, বৌদি…
এই যে আমাকেও বৌদি বলে বললে আর চা হবেনা. রুমা আর তুই বলতে হবে.
লে হালুয়া আচ্ছা তাই সই.
রুমা তুইও শোন, আমি কেস টা এই ভাবে গোছাব যে, মেয়েটা সুজিতকে মনে মনে ভালোবাসতো, কিন্তু সুজিত ওকে বন্ধু হিসেবে দেখত আর আপনার সাথে বিয়ে হয় ওর. সেই জন্যে মেয়েটা অভিমানে এরকম করেছে. এ ছাড়া আর কোনো কিছু আমার মাথায় আসছেনা, ওকে বাচানোর জন্যে. মেয়েটা মাঝে মাঝেই সুজিত কে ফোন করতো, রুমা কে ছেড়ে ওর সাথে বিয়ে করার জন্যে. কিন্তু সুজিত রাজি ছিলনা ওকে খালি বোঝাতো. এই নাহলে এতক্ষণ ধরে কথা বলার উদ্দ্যেশ পরিষ্কার হবেনা.
তারপর বাকিটা স্টেজ মেকআপ করবো.
আজ চলি, দেরী হয়ে গেছে. তুই নিশ্চিন্তে থাক আর বিকেলের টিভিতে দেখে নিস.অরূপ বেরোতে না বেরোতেই, আবার কলিং বেল, আবার আমিই হ্কুলতে গেলাম, জানি এখন রুমাকে পাঠানো ঠিক না, কে না কে এসে কি বলবে আর ও সামলাতে পারবেনা. একদিক দিয়ে আমার ভাগ্য ভালো যে আমি চাকরি বা গতানুগতিক অফিস করিনা, না হলে এতক্ষণে ভিষণ চাপ সৃষ্টি হয়ে যেত, সেদিক সামলানোও একটা দারুন চাপের ব্যাপার হোত.
আবার তুই? এই যে বললি তারা আছে.
রুমা চা করলো পুরো খাওয়া হলো না তাই ফিরে এলাম.
এই নাহলে সরকারী চাকরি? বা: বা: বা: বা:
তোর ফাটছে কেন? তুইও হাবিজাবি কিসব আকিবুকি কাটিস আর লোকে মুরগি হয়ে সেগুলো কিনে নিয়ে যায়, আর্ট বলে. কি যে ছাইপাস আকিস আমি বুঝিনা.
তোর বোঝার জন্যে তো আকিনা! যারা বোঝে তারা কেনে.
কিরে দরজা খুলবি?
ওহ: সরি সরি,
রুমাও ওকে দেখে অবাক হয়ে গেল?
কি হলো?
শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে রয়েছিস, বাইরের কোনো খবর পৌছই না তোদের কাছে.
কেন? আসলে কালকের ঘটনার পরে দরজা জানলা খুলতে লজ্জা হচ্ছে দেখলেই তো লোকে নানা প্রশ্ন করবে.
একবার জানলা খুলে দেখ না,
রুমা জানলা খুলতেই বুঝতে পারলাম বাইরে বিভত্স ঝড় জল হচ্ছে.
তোর কাছে ইন্টারনেট আছে?
হ্যা আছে?
নে রুমা রেইনি ডে স্পেশাল কি মেনু আছে বানিয়ে ফেল আর তোর বরের একটা হাফ প্যান্ট থাকলে দে. আজ অফিস টা তোদের বাড়িতেই বানিয়ে ফেলি, যদি আপত্তি না থাকে, আমার তো আর তোর মতো কেউ নেই যে আবদার করবো?
কেনরে তুই বিয়ে করিসনি?
শালা এই চাকরি করে বিয়ে? নিজের জীবনের ঠিক নেই তো আরেকটা মেয়েকে শুধু শুধু বিধবা বানাবো?
যাহ কি যে বলিস না, রুমার চোখে মুখে স্বাভাবিক নারীসুলভ এক্সপ্রেশন.
নারে সিরিয়াসলি বলছি, তোকে হিন্টস দেব বলে আমি আসল নামটা বললাম, নাহলে তাও কাউকে বলিনা. এই কেসএ আমার এরকম চেহারা দেখছিস, অন্য কেসএ আমাকে চিনতেই পারবিনা, তোর বাড়িতে এসে চা খেয়ে যাব তুই বুঝতে পারবিনা.
শোনো মাকে বলি রিতম কে দিয়ে যেতে, খিচুরী বানাই চিংড়ি মাছ দিয়ে, ওর তো ফেবারিট মেনু.
ডাকবে? ও বলল যে কাজ করবে?
আরে ডাকবিনা মানে? আমি দেখবনা আমার ভাইপো কে, এত বড় অন্যায় তুই করতে পারবি?
নাহ: তোর প্রবলেম হবে ভেবেই বলছিলাম.
প্রবলেমের গুলি মারি একশ আট বার, না ফুরোলে আরো কয়েকবার, তুই ওকে আনা এক্ষুনি আনা. বল রুমাকে নিয়ে আমি গাড়ি করে যাচ্ছি.
আচ্ছা তুই তোর কাজ কর্ম করে নে আমি ব্যবস্থা করছি.
তোর ল্যাপটপ বা কম্পিউটার আমাকে দে একটু।
আমি আমার ল্যাপটপ এনে দিলাম আর সাথে ইণ্টারনেট কানেকশন।
ও কাকে ফোন করলো, যে ও ঝড়জলে আটকে গেছে, তাই কোনো সাইবার কাফে থেকে ই-মেইল কোরে দিচ্ছে রিপোর্ট।
এবার ল্যাপটপ নিয়ে একমনে কাজ শুরু করে দিলো, আধঘন্টা পরে আমাকে কি লিখলো সেটা দেখালো, তারপর সেটা কোনো একটা মেইলে পাঠিয়ে দিলো।
পাঠিয়ে আমার দিকে ঘুরে তাকালো। কি বিশ্বাস হোলো।
গলা বুজে এল আমার, এত বড় ঝঞ্ঝাট এত সহজে কাটতে চলেছে ভেবে। অরুপ যেন ভগবান হয়ে আমার বাড়িতে এসেছে।
রুমা এখনও কিচেনে, অরুপ গলা নামিয়ে আমাকে জিগ্যেস করলো, মালটা মরেছে বেশ ভালই হয়েছে, পাক্কা খানকির ছেলে ছিলো। কিন্তু মেয়েটা ওকে নামালো কেন? সেটা আমার প্রশ্ন। তুই কিছু জানিস।
দ্যাখ এই লোকটার গল্প আমি মেয়েটার মুখে শুনেছি, কিন্তু বুঝতে পারিনি যে ও এরকম করবে?
কি শুনেছিস বলতে তোর আপত্তি আছে?
না না আপত্তি তো নেই ই বরঞ্চ আমি বলে হাল্কা হতে চাই। কিন্তু ধৈর্য ধরে শুনতে হবে, আর তোকে আলাদা করে না, আমি তুই আর রুমা দুজন কে একসাথে বোলবো।
ঠিক হ্যায় বস। তাহলে রুমা ফ্রী হয়ে আসা পর্যন্ত একটা একটা সিগেরেট খাওয়া যাক।
কিছুক্ষণ পরে রুমা এসে বসল আমাদের সাথে, আমি শুরু করলাম। উত্তর প্রদেশের একটা বাঙালি অধ্যুসিত কলোনি- ডিসেম্বর ১৯৮০।
কুয়াশা ভরা শীতের সকালে, এক পরমা সুন্দরি পাঞ্জাবি মহিলা তার চার বছরের ছেলেকে স্কুল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসছে। দামি বিদেশি গাড়ির স্টিয়ারিং মহিলাটির হাতে, বাচ্চাটা বেশ নাদুসনুদুস আর খুব আদুরে পুরো ওর মার মতো দেখতে। মাথায় ওপর বড় বড় চুলগুলো টেনে ছোট্টো খোপা করা, আজ হয়ে ওদের শীতের ছুটি পরবে। ওর মা গাড়ি চালালে হর্ন বাজানো ওর কাজ। মাঝে মাঝেই অকারনে হর্ন বাজিয়ে চলেছে।
ওর মা ওকে ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় বলছে, আজকে তুমি দুষ্টু করেছ কেন?
আমি তো কোন দুষ্টু করিনি।
তুমি না করলে টিচার কেন তোমার নাম বললেন।
মা ওরা কেন আমাকে মোটা মোটা বলে ডাকে?
তুমি টিচারকে বলে দেবে, তুমি টিচারকে বলোনা কেন?
টিচার আমার কথা শোনেনা।
আচ্ছা আমি স্কুল খুলুক টিচারকে ডেকে খূব বকে দেবো।
সত্যি মা, তুমি টিচারকে বকে দেবে?
হ্যা সাথে তোমার বাবাও বকবে।
খুব ভালো হবে, খুব ভালো হবে, আমি ক্ল্যাপ করবো।
নো নো আমার সোনা বাবা। ওরকম করেনা। ধিরে ধিরে ওরা বাড়িতে ঢুকলো।
বিরাট বড় সেই সিংহ দরজার সামনে গাড়ি দাড়াতেই ছেলেটা গাড়ি থেকে নেমে গেল, দরজাটা ঠেলে ছেলেটা তাতে চড়তে চড়তে ভিতরে ঢুকলো। ওর মা দৌড়ে ওর পিছু নিলো, যাতে ও পরে না যায়।
মা আর ছেলের এই চলে সারাদিন, ছেলে সারাদিন দুষ্টুমি করবে আর মা হাসি মুখে সব সয়ে যাবে.
ঘরে ঢুকেই বাচ্চাটা স্কুলের ড্রেস খুলে লেংটো হয়ে গেল, “মা আমাকে কার্টুন চালিয়ে দাও”
রাজ যাও গিয়ে আগে ওয়াশ করে নাও, আর প্যাণ্টূ পরে নাও। নাহলে কক্রোচ এসে নুণ্টূটা চেটে দিয়ে যাবে।
মা পরে যাব একটু দেখেনি না.
না সোনা, এখুনি যাও। সবাই দেখলে কি বলবে? এত বড় ছেলে লেংটো।
কোলে করে নিয়ে যাও।
না সোনা যাও না হলে তুমি বিমার হয়ে যাবে, আবার ডাক্তার ডাকতে হবে আর এসে ইনজেকশন দিয়ে দেবে.
মা, কোলে করে নিয়ে যাও না, প্লিজ।
ওকে বেটা, মা ছেলেকে কোলে কোরে ওয়াশ রুমে নিয়ে গেল।
হাত পা ধুইয়ে দিয়ে মা যখন ওকে বের করে আনতে যাচ্ছে তখোন হটাত ছেলেটা শাওয়ার চালিয়ে দিল, আর মা পুরো ভিজে একশা।
মা ওকে তাড়া করলো ধরবে বলে, সে একছুটে টিভি রুমে। মাও পিছন পিছন গিয়ে ওকে ধরলো। ছেলের ওজন সামলাতে না পেরে দুজনেই বিছানার ওপর গিয়ে পড়লো।
রাজ তুমি এত দুষ্টূ হয়ে গেছো?
সরি মা, মার ওপরে ন্যাংটো হয়ে শুয়ে বললো। অবোধ সেই শিশুর চোখের দিকে তাকিয়ে মা যেন নিজেকে হারিয়ে ফেললো।
মাও ওকে জড়িয়ে ধরলো বুকের সাথে।
সারাদিন দুজনের এই রকম খুনশুটি করে কাটে।
মহিলাটির নাম সিমরন, পাঞ্জাবের এক দরিদ্র চাষী পরিবারের মেয়ে. ঘটনা যখনকার তখন পাঞ্জাবের চাষীরা না খেতে পেয়ে আত্মহত্যা করতো.
এর স্বামী সূর্যশেখর চৌধুরী, উত্তর প্রদেশের জাতীয়তাবাদী এক রাজনৈতিক দলের মাঝারি মাপের নেতা. সিমরনদের গ্রামে গিয়ে সিমরন কে দেখে পছন্দ হয়ে যায়. তারপর বাঙালি মতে মালাবদল করে বিয়ে আর বিয়ের দু বছরের মাথায় রাজ অর্থাত রাজশেখর চোধুরীর পৃথিবীতে আগমন.
সূর্য চৌধুরী, নিজেকে জাতীয় স্তরের নেতাতে পরিনত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে, ছোটখাটো ইলেকশন জেতেন ঠিকই কিন্তু দল তাকে বড় দায়িত্ব দিতে নারাজ. সেখানে বয়েস অনুসারে এগোতে হবে.
চোখে রিমলেস চশমার আড়ালে ক্ষুরধার দীপ্তিময় চোখ দুটো সুর্যবাবুর বিরাট অস্ত্র. সবসময় সাদা কুর্তা আর চুরিদার তার পরনে. দিনে তিন থেকে চারবার দাড়ি কাটেন, গালটাকে মসৃন মাখনের মতো পিছলা দেখায় তার যেন জল পড়লে জলের দাগ পরবেনা. তেল দেওয়া চুল সযত্নে ব্যাকব্রাশ করা. আর ছ ফুট লম্বা পুরুষালি চেহারা তার ব্যাক্তিত্বকে আরো বিক্রয়যোগ্য করে তুলেছে, যা রাজনিতির সঙ্কীর্ণ পথে বিরাট অস্ত্র।
সকল বিকেল জনতার দরবার বসে তার প্রাসাদোপম বাড়িতে(নিন্দুকেরা বলে যে এই এতো সম্পত্তি বিভিন্ন জায়গার কাটমানির ফল). তারপর দলীয় কার্যালয়ে সারাদিন কাটে তার. সংসারে তার ছেলে বা বৌএর জন্য সময় খুব কম. সিমরনই একা হাতে চাকর বাকর, বাজার হাট সর্বপরি ছেলের স্কুল আর ছেলের বায়না সামলান. একমুহুর্তের জন্য মুখের হাসি যায়না. কেউ কোনদিন উনাকে রাগতে দেখেননি.
বাঙালি সোসাইটিতে মিশতে মিশতে ভালো বাংলাও রপ্ত করে ফেলেছেন.
ছেলেকেও বাংলাতেই সব কিছু শেখান.
সূর্যবাবুর সময় খুব একটা ভালো যাচ্ছেনা.
বিধানসভা নির্বাচন আর মাস ছয়েক পরে. অনেক তদ্বির করছেন টিকিটের জন্যে কিন্তু এবার দল উল্টো পথে হাটছে. ওর থেকে সামন্য বড় একজন অনভিজ্ঞ কাউকে দাড় করাতে চলেছে. সূর্য মন থেকে এই ব্যবস্থা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা. চ্যালাচামুন্ডারা ঘৃতে অগ্নিহুতির মতো কানের কাছে সব সময় বলে চলেছে, দল এটা কি করছে, সুর্যবাবু থাকতে এই এলাকায় অন্য লোক! যে কিনা লোকজনকেই চেনেনা. ছি: ছি: এই ভাবে দল বাড়বে কি করে?
কেউ একজন আবার খবর দিলো নতুন প্রার্থীর ধর্মীয় কানেকশন খুব ভালো, যেটা তুরুপের তাস উত্তর প্রদেশ নির্বাচনে.
নানা মুনির নানা মতে সূর্য সঠিক সিধ্বান্তে আসতে পারছিল না.
একবার ভাবছিল দল ছেড়ে দিয়ে নিজে নির্দল হয়ে দাড়াবে আরেকবার ভাবছিল, বিরোধী দলে যোগ দেবে. এতদিন দলের অনুগত সৈনিক হিসেবে কাজ করেছে আর আজকে এই দিন দেখালো দল. আজ না হলে আবার কবে হবে? আর কতদিন এরকম অপেখ্যা করতে হবে?
রাতেও ঘুমোতে পারছেনা ঠিক মতো.
সিমরন সেটা খেয়াল করে? কি হয়েছে তোমার? খুব চঞ্চল দেখছি তোমাকে, সূর্যর বুকের ওপর সোহাগ ভরে মাথা রেখে সে বলে. রাজ বাবা বাবা বলে দৌড়ে এলো তুমি দেখলেই না. কত কাঁদলো জানো? বহু কষ্টে ঘুম পারিয়েছি.
সিমরন অভি হাম পরেশান হ্যায়, বাদ মে বাত করেঙ্গে তুম সো যাও. বক্ত আনে সে সব বাতায়েঙ্গে তুমকো.
সিমরন সূর্যকে চেনে. এরকম অবস্থায় আরেকটা কথা মানে বিপজ্জনক তাই চুপ করে গেল.
ও জানে সূর্য এই মুহুর্তে জটিল কোনো রাজনৈতিক কানাগলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে. তাই আর কথা বাড়ালোনা।
সূর্য একবার নিজের মনে বলে উঠলো “শালা ধর্মীয় ভোট”.
জানুয়ারী ১৯৮১,
নীলিমা ভবন (সূর্যদের বাড়ির নাম সূর্যর মায়ের নামে রাখা) রাত আড়াইটা জরুরি এবং গোপন বৈঠক বসেছে এই বাড়ির অন্দর মহলে.
সিমরন ছেলেকে নিয়ে ঘুমিয়ে আছে. ছেলের মার গলা জড়িয়ে না শুলে ঘুম হয়না।
বৈঠকের অংশগ্রহণ করেছে এক বিশাল চেহারার লোক যে কিনা ওই এলাকার ধর্মীয় জনগনের দন্ডমুন্ডের অধিকর্তা. বিশাল তার চেহারার সাথে মানানসই বিভত্স গোফ লম্বা ঝোলা দাড়ি কাচা পাকা মিশিয়ে প্রায় বুক পর্যন্ত ঝুলছে, সাদা কুর্তার সাথে সাদা আলিগরী পাজামা গোড়ালির ওপরে উঠে আছে. সাথে নানাবিধ খাদ্যবস্তু মাংস, মাছ, তন্দুরি, র পুলাও, বিরিয়ানি কি নেই তাতে, সাথে ঠান্ডা সরবত. সব একেবারে সার্ভ করে দিয়ে গেছে চাকর বাকর কারণ এদের কথা শুরু হলে কেউ আর ঢুকতে পারবেনা.
খানাপিনার সাথে সাথে নানাবিধ আলোচনা শুরু হলো.
প্রথমে স্থানীয় রাজনীতি থেকে শুরু করে রাজ্য তারপর জাতীয় তারপর আন্তর্জাতিক.
রাজনীতিতে দুজনেরই প্রখর জ্ঞান যার ফলে আলোচনা বেশ জমে উঠেছিল.
খানাপিনা শেষ করে ঘরের লাগোয়া ওয়াশ রুমে গিয়ে দুজন হাতমুখ ধুয়ে এসে বসলো.
সেই ভদ্রলোক বললেন বলুন সূর্য বাবু কি করতে পারি আপনার জন্যে, এতক্ষণ নিশ্চয় রাজনীতির চর্চা করতে আমরা মিট করিনি.
হ্যা আপনি ঠিকই ধরেছেন, কাজের কথায় আসা যাক.
হ্যা রাত অনেক হলো, ইলেকশন সামনে, কেউ যদি দেখে নেই যে আপনার বাড়ি থেকে এতো রাতে বেরোচ্ছি তো কাল নিউস পেপার ফলাও করে বেরোবে.
হা হা হা হা সূর্য জোরে হেসে উঠলো.
কেন আপনি কি একদিনের জন্যে আমার মেহমান হতে পারেন না.
আরে ভাই ইচ্ছে তো করে কিন্তু আপনার বন্ধুর জন্যে তো পারিনা.
কে কার কথা বলছেন?
কেন আপনাদের নতুন প্রার্থী.
কেন ও কি আপনাকে বারণ করেছে?
না বারণ করেনি, কিন্তু জানেন তো এটা সবাই জানে যে আপনাকে ল্যাং মেরে ও প্রার্থী হচ্ছে তার জন্যে ও কত কি করছে যাতে আপনি মাথা তুলে দাড়াতে না পারেন.
ওহ: তাই নাকি.
এই তো সেদিন এক কোটি টাকার ডোনেসন তুলে দিলো আমার হাতে. যখন যা চাই তাই হাজির. তো বলুন আমি উনার দিক দেখব না আপনার.
হ্যা ঠিকই তো আপনি কি করে বিশ্বাস ঘাতকতা করবেন, আমিতো চিরকাল মানুষের কাছে থেকে মানুষের জন্যে করে এসেছি, ধর্ম কর্ম অন্য দল এসব দেখিনি, তাই এসব শুনলে আমার যেন কি রকম লাগে, ভাবি রাজনীতি আর মানুষের জন্যে নয়.
আচ্ছা একটা কথা বলুন আমি যদি আপনাকে একই অফার করি আর বলি যে আপনি এই ইলেকশনটায় আপনার সমস্ত ভাইদের ভোট, আমি দাড়ালে, তবে আমার দল পাবে বলে ঘোষণা করবেন, তাহলে কি করবেন?
একটু ভেবে- আমি আন্দাজ করেছিলাম যে আপনি আমাকে অফার করবেন. দেখুন আপনি হলেন আমার অতি পরিচিত আর আপনার দলের লোক সে এই এলাকায় নতুন, কিন্তু ওকে খারাপ তো বলতে পারিনা, হ্যা ওর সঙ্গ ত্যাগ করতে পারি একটা শর্তে যদি আপনি অফারটা সেরকম করেন যেটা ও আর ঘুরে দিতে পারবেনা.
আপনাকে কিন্তু আমার দলের হাই কমান্ডকে বলতে হবে যে আপনি একমাত্র আমি দাড়ালে তবেই আপনার সমর্থন আমাদের দলকে দেবেন, কারণ বলবেন যে আমার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা. আর মানুষের জন্য কাজ করার দখ্যতা.
এত বছরের অভিজ্ঞতা আমার, সেটা আমি ঠিক বলে দেব, কিন্তু কত কি বলছেন সেটার ওপর নির্ভর করছে.
দশ. পুরো দশ কোটি দেব আপনাকে. আপনার দায়িত্ব আপনি নিজে কত নেবেন আর কত উন্নয়নের জন্যে খরচা করবেন. সে ব্যাপারে আমি নাক গলাবোনা।
একদৃষ্টে সূর্যর দিকে তাকিয়ে থেকে, আপনি দেখছি এবার MLA হয়েই ছাড়বেন. একদম কোমড় বেধে নেমে পড়েছেন তো.
কি করব বলুন, দেখলেন তো যে দলের জন্যে এতো কিছু করলাম তারাই কেমন বিট্রে করলো. কাকে বিশ্বাস করবেন বলুন তো.
যা: এরকম বলবেন না দলও তো আপনার বিপদে আপনার পাশে ছিলো. রিয়েল এস্টেট কেসটাতে দল না থাকলে তো আপনার…… হা হা হা হা.
আরে ধুর রাজনীতি করতে গেলে ওসব কত আসে যায়. ওসব বিরোধীদের চক্রান্ত.
সত্যি সাহেব, রাজনীতি থেকে অনেক শেখার আছে, ফেসে গেলে আমাকে ফাসিয়ে দিয়েছে, বেচে গেলে বিরোধীদের চক্রান্ত…….হা হা হা হা.
এই নাহলে রাজনীতি. আরে আমি আমার পজিশন ঠিক রাখতে পারলে তো মানুষের জন্য করবো. জেলে থাকলে কি ছাই করবো আর কে আমাকে মনে রাখবে. আর টাকা পয়সার তো দরকার হয়ই। কে দেবে বলুন। এই যে এত এত লোক কোটি কোটি টাকা ঢালছে ব্যাবসায় তাদের তো নিরাপত্তা চায়।
হা হা হা হা ঠিক ঠিক একদম ঠিক বলেছেন ভাই. আপনি ইয়ং ছেলে বেশ ভালো লাগলো আপনার এই জোশ. চলুন হাত মেলান, পারার ভাইয়ের সাথে থাকব না তো কি বাইরের লোককে ডেকে এনে বলব নে তুই আমাদের নেতা.
আজ চলি, বাকিটা বলে দেবেন কবে দেবেন. আর প্রথম কিস্তি ৫০% দেবেন তো দলকে আমি বলে দেব আমার মনের কথা যে কাজের লোক আমার মহল্লার লোক ছেড়ে আমি অন্য কাউকে সমর্থন করবো না. দশ কোটি? দশ কোটি, মেরে কেটে তিন কোটি যোগার হবে সমস্ত প্রপার্টি এদিক ওদিক করলে. দশ কোটি এখন কোথা থেকে আসবে? সূর্যর মনে বিরাট প্রশ্ন চিহ্ন.
সে চুপ করে বসে রইলো সেই ঘরে যেখানে একটু আগেই এই ডিলিং টা ফাইনাল হলো. মাথার মধ্যে অনেক গুলো শুন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে, একের পরে কটা শুন্য হলে দশ কোটি হয়. কিন্তু খারাপ সময়ে মাথা ঠান্ডা রাখা সূর্যর বিশেষ গুন, ও নিশ্চিত যে কোনো না কোনো ভাবে সে এই অবস্থা থেকে ঠিক বেরিয়ে আসবে. নিজে স্বভাবত ধার্মিক না, কিন্তু বিপদে পড়লে মাঝে সাঝে ভগবান কে ডাকে. সেইরকমই ভগবানকেও মনে মনে ঘুষ অফার করলো, “একবার জিতে আসতে দাও আমি তোমার নামে একটা মন্দির করে দেব”
সূর্য ১২ বছর রাজনীতিতে আছে, অভিজ্ঞতা বলে, দুনিয়ার ধান্দাবাজ লোকেরা এখনো জেগে আছে আর ফন্দিফিকির করে চলেছে. সেই রকম কয়েক জন কে ফোনে এ ধরলো. মুখের ওপর কেউ না বললেও সবাইই সন্দেহ প্রকাশ করলো যে দলের লাইন ভেঙ্গে উল্টো রাস্তায় গাড়ি চালালে কি ওর গন্তব্যে পৌছুতে পারবে সূর্য? সেরকম কারোর আস্বাস সে পেলনা। সবাইই দেখছি দেখব, সময় লাগবে বলে কাটিয়ে দিলো।
হতাশায় ওর মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো ” সব কটা খানকির ছেলে, আমি জিতলে এরাই শালা সবার প্রথমে ফুল পাঠিয়ে লাইন দিয়ে রাখবে যে কতটা ফেবার নেবে ভবিষ্যতে শালা একবার আসুক তখন আজকের দিনের কথা মনে করিয়ে দেব”।
আর কে বাকি? কে এত বড় এমাউন্ট দিতে পারে.
ভুতো কে ফোন লাগাবো?
ভূপতি বসু। শালা তো বিরাট বড় ইন্ডাসট্রিয়ালিস্ট. কিন্তু ওকে ফোন করব? শালা আমি বিপদে পড়লে তো ওর আনন্দ, সেই কলেজ লাইফ থেকে দেখছি. বরাবরই আমার সাথে ওর প্রতিযোগিতা. আমার বিয়েতে এসেও বৌএর আতিপাতি খোজ নিচ্ছিল, বরাবরের ছিদ্রান্বেষী. মনে মনে এরকম চিন্তা করেও পিছিয়ে যাচ্ছিলাম. ব্যাটার অনেক ঠাট বাট। মনে মনে আমাকে হেয় করতে পারলে ওর দুনিয়াতে আর কিছু চায়না। শালা কোনোদিন দান ধ্যান করতো না, আমি এই পার্টি করি দেখে, আমাদের দিল্লি শাখায় লাখ লাখ টাকা, লোক দেখান ডোনেশন করে। উদ্দেশ্য- “ওহঃ তুইও এই পার্টি করিস, আরে তোদের নেতা অমুক তো আমার বিশেষ বন্ধু” শুধু মাত্র এটূকূ শোনানোর জন্যে। কিন্তু মালটা ইচ্ছে করলে দিতে পারে। একবার নির্বাচনের বৈতরণী পাড় করে নি, তারপর তোর লম্ফঝম্ফ বন্ধ করতে কতক্ষণ আর। পনের বছর ধরে পিছন ঘষছি এই লাইনে।
মনে মনে সূর্য বলল, হয় আজ নয়তো চিরকাল অন্য কারো দাক্ষিণ্যের আশা করে বসে থাকতে হবে। সূর্যশেখর চৌধুরি তুমি চিরকাল স্থানিয় নেতা হিসেবে দলের অনুগত সেনা হয়ে থাকবে। কোনোদিনই সেনাপতি হতে পারবেনা।
মনে মনে এরকম হাজার হাজার চিন্তা সূর্যর মাথায় ঘুরতে থাকলো।
ভাবতে ভাবতেই ও ওর কলেজ বন্ধু ভূপতি বসু ওরফে ভুতো কে ফোন লাগালো।
একটা মহিলার গলা, হ্যালো! সূর্য মনে মনে বলল শালা এর মাগির নেশা গেলনা, বিয়ে থা না করে সব ভাড়াটে মেয়েছেলে নিয়ে হিল্লিদিল্লি করে বেরায়, আর বড় বড় বাত ছারে।
হ্যালো, ভূপতি বসু আছেন?
এত রাতে উনি তো বিশ্রাম নিচ্ছেন।
উনাকে বলুন যে আমি সূর্যশেখর চৌধুরি উনার কলেজের বন্ধু। বিশেষ দরকারে ফোন করেছি। খুব আরজেন্ট।
বলছি, কিন্তু জানিনা উনি ফোন ধরবেন কিনা। সূর্য শুনতে পেলো পাস থেকে ওর বন্ধুর গলা, কে কে ফোন করেছে?
সূর্য আবার মহিলাকে বলল আপনি উনাকে দিন।
ফোনে এখন ভুপতি,
হ্যা বলছি।
আমি সূর্য বলছিরে।
আরে কি ব্যাপার এত রাতে?
বিরক্ত করলাম নাতো?
না না বল কি ভেবে ফোন করলি।
বলছি যে একটু ফান্ডের দরকার ছিলো। যদি হেল্প করতে পারিস।
তুই শালা আমাকে ফোন করলি তাও ফান্ডের জন্য? কি ব্যাপার।
নারে খুব ফেসেছি। ফোনে এত কথা বলা যাবেনা। তুই বল কোথায় দেখা করা যায়।
হুম, (একটু ভেবে) ঠিক আছে একটু ভেবে বলতে হবে কাল একবার ফোন কর। দেখি কোথায় মিট করা যায়। তাও তুই কত এক্সপেক্ট করছিস?
এখন বলবো না মিট করলে সাব বলবো।
আরে বাবা এটা তো বলতে পারিস লাখে না কোটিতে?
সব বলবো একটু ধৈর্য ধর।
ঠিক আছে। কাল ফোন কর একবার।
ফোন টা কেটে ভুপতির চরম উল্লাস হলো। সামনে দারানো নগ্ন, উগ্র যৌবনা, মাঝ বয়েসি মহিলাটির দিকে তাকিয়ে নিজের মনে বলে উঠলো “আব আয়েগা মজা”।
মহিলাটি তার খদ্দেরের আনন্দ আরো বাড়িয়ে তুলতে ভুপতি বসুর দু পায়ের মাঝখানে মাথা নিয়ে গেলো।
আরেকটা ভোর এল সিমরনের জীবনে। জানলার পরদা সরিয়ে দিতে দিতে যেন ক্লান্ত হয়ে যেতে হয়। জানলার সামনে দারিয়ে বারির সামনে বিরাট গাছগাছালি ভরা উদ্যানের দিকে তাকিয়ে মনে হয় এই জীবন কি সুন্দর। ঘুরে ঘুমিয়ে থাকা রাজের মুখের দিকে তাকায়, চোখে আলো পরাতে বাবুর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে। মাথার না কাটা চুল, অন্য সময় যেটা খোঁপা করে শিখ বাচ্চাদের মত বাঁধা থাকে সেটা খুলে চারিদিকে অবিন্যস্ত হয়ে আছে। দেখতে যেন একটা দেবশিশুর মত লাগছে। একটু পরেই মাকে পাসে না পেয়ে ঘুম ভেঙ্গে যাবে আর হাউ মাউ করে কাঁদতে শুরু করবে। সিমরনের খুব ভালো লাগে ওর চোখে মায়ের জন্যে আকুলিবিকুলি দেখতে। ওকে টেনে কোলে তুলে নিয়ে খুব আদর করে রোজ এই সময়টাতে। সবাই বলে যে ও নাকি বয়সের তুলনায় মোটা, সিমরনের কখোনো তা মনে হয়না, আরে বাবা এইটুকু বাচ্চার হাইটটা তো দেখেতে হবে! ঘুম চোখে রাজও মার বুকে মুখ গুজে আদর খায়। সত্যি তো এই মুহূর্তে ও ছাড়া কে আছে আপনজন। ওর বাবা তো সারাদিন নিজেকে নিয়ে ব্যাস্ত। ছেলেটার দিকে ঘুরেও তাকায়না। সিমরন তো বহুদুর।
শেষ কবে কাছে এসেছিলো স্বামি আর স্ত্রী, প্রায় ভুলে গেছে ওরা। তবুও এই লোকটা তার ভগবান. মনে মনে ওকে পুজো করে সিমরন. যে নরক থেকে সূর্য ওকে তুলে এনেছে, তাতে ওকে ওর বাড়ির কাজের লোক বানিয়ে রাখলেও অনেক সন্মান দেওয়া হতো. সিমরন বা ওর পরিবার সত্যি কোনদিন ভাবেনি যে এরকম কেউ ওকে বিয়ে করবে.
ঠিক করে খেতে পেতনা ওরা. বাবার ঠিক মতো চাষ হতোনা. বছর বছর ধারের বোঝা বেড়ে চলতো, আর সাথে জমিদারের অত্যাচার. রাতের বেলা ঘরে আগুন দিয়ে দেওয়া থেকে মেয়েদের সন্মানহানি, এসব সহ্য করা ওদের জলভাত ছিলো. সিমরনের শত্রু ছিলো ওর রূপ আর উঠতি যৌবন. ভগবান ওকে অনেক সময় নিয়ে বানিয়েছে, কিন্তু ঠিক মানুষটাকে ভুল জায়গায় পাঠিয়েছিলো. যৌবনের মৌচাকের মধু খেতে ভ্রমর তো আসবেই. সেই রকম রাস্তাঘাট, বাজার, দোকান, কলেজ, সব জায়গায় ওর পিছনে পিছনে ওর যৌবনের প্রসাদ পেতে সবাই ঘুর ঘুর করতো.
কেউ একটু আধটু সাহসী হয়ে শরীরের বিশেষ বিশেষ জায়গাতে হাত পর্যন্ত দিয়ে দিতো. কলেজ যাতায়াতও ওর কাছে বিভীষিকা হয়ে উঠেছিলো। হবেনাই বা কেন, ও যে যৌবনের জীবন্ত মূর্তি ছিলো. যেমন রূপ তেমন রং তেমন শরীরের গড়ন. যেন পাথর কুদে মূর্তি তৈরী করা, সব কিছু একদম সঠিক মাপে মাপে তৈরী.
প্রতিভা যেমন লুকিয়ে থাকেনা রূপ যৌবনও লুকিয়ে রাখতে পারেনা কেউ. হতদরিদ্র চাষীর ঘরে এমন রূপ আর যৌবন, এটা যেন সমাজের দন্ডমুন্ডের কর্তারা ঠিক মন থেকে মেনে নিতে পারছিলনা. তাই উপরে ফেলতে চাইছিল এই গোলাপটা. গরিবের আবার কিসের বাগান রে? আবার তাতে এত ভালো ফুল ফুটিয়েছে. তাই রাত বিরেতে সিমরনের যৌবন ভোগ করতে যৌন ক্ষুদার্ত সেই দন্ডমুন্ডের কর্তারা তাদের পোষা কুকুরগুলোকে ছেড়ে দিতো, যা তুলে আন বলে. রাতের পর রাত আখের খেতের মধ্যে ইদুর, সাপ, খোপ এদের সঙ্গী করে জেগে বসে থাকত সেই মেয়েটি আর মেয়েটির মা.
এরকম একবার দুদল একসাথে এসে গেল সিমরনকে তুলে নিয়ে যেতে, আর তাদের সংঘর্ষ বাধলো, লক্ষ্য সিমরন হলেও সেটা জমি দখলের লড়াই হিসেবে পরিচিত হলো পরবর্তী কালে. দুটো গ্রামের রাস্তা ঘাটে কুকুর ছাগলের মতো মানুষের মৃতদেহ পরে থাকলো.
সেই সময় সূর্যর সেখানে প্রবেশ, একটা রাজনৈতিক দলের হয়ে শন্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে সে সেখানে প্রচুর মিটিং মিছিল করলো. সেই সময় এক মিটিং চলাকালীন সিমরনের মা বাবা সিমরন কে নিয়ে তার সাথে দেখা করে সব খুলে বলে. সেই তাদের দু চোখ এক হলো. এতদিন সিমরন দেখেছে যে পুরুষ মানুষের বিকৃত কামনালোলুপ দৃষ্টি, এই প্রথম কোনো পুরুষ তাকে সন্মানের সাথে দেখলো. কি নজর তার, যেন মনের ভিতর কি হচ্ছে সেটা পরে ফেলবে, এত তীক্ষ্ণ তার চাহুনি. মনে মনে ভালো লেগে গেলেও সাহস করে চোখ দিয়ে তা প্রকাশ করতে পারেনি সিমরন. তাই যখন সবার সামনে সূর্য ঘোষণা করলো যে ও সিমরনকে বিয়ে করতে চায় , সিমরন যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলনা.
এই ঘোষণায় সূর্য নিজের প্রতিপত্তি অনেক বাড়িয়ে নিয়েছিলো পিছিয়ে পরা মানুষ গুলোর মধ্যে. তাতে সিমরনের কি যায় আসে. সেতো তার স্বপ্নের পুরুষের সাথে স্বপ্নের ফেরিতে বসে এসে নীলিমা ভবনে উঠলো. সেই শুরু. তারপর ধীরে ধীরে আদপ কায়দা সেখা, নিজেকে চর্চা করা, আর একদিকে সূর্যর সংসার সামলানো. সেই তার চলা শুরু.
আজকে এক মুহূর্তের জন্য ফ্ল্যাশব্যাকে চলে গেছিল সিমরন।
ঘোর কাটলো রাজের কান্নায়। ব্যাটা উঠে গেছে। আর যথারীতি মাকে দেখতে না পেয়ে চিল চিৎকার জুরে দিয়েছে।
পা টিপে টিপে গিয়ে সিমরন ওকে জড়িয়ে ধরল।
“মা তুমি কোথায় গেছিলে? রোজ তুমি চলে যাও কেন?”
“কোথায় গেছিলাম বাবা, এই তো আমি” বলে ছেলের গলা জড়িয়ে ধরলো সিমরন. তুলতুলে সেই শিশুদেহ ধরে মায়ের মমতা যেন উপছে পড়ে।
মার গলা জড়িয়ে ধরে রাজও আশ্বস্ত হয় যে সে এখন একা না. তার কান্না থেমে যায়.
আজকে আমার বাবা কি খাবে?
খাবোনা.
কেন?
না আমার খেতে ভালো লাগেনা.
কেন?
আমার কার্টুন দেখতে ভালো লাগে.
আহা রে.
আগে ব্রাশ করে পটি করে কিছু খাবে তারপর কার্টুন.
আমি চিকেন খাব এখন.
চিকেন খাবে এখন?
না না চিপস খাবো.
ওহো:
আমি তো চিপস রান্না করতে পারিনা.
তাহলে আমি আইসক্রিম খাবো.
সেটাও তো পারিনা.
আমি খাবোনা.
আচ্ছা মা তোমার জন্যে, এগ আর ব্রেড আর মিল্ক দেবে তুমি খেয়ে নাও তারপর কার্টুন দেখবে.
না আমি মিল্ক খাবোনা আমি চা দিয়ে বিস্কুট খাবো.
সিমরন ছেলের গালটা টিপে দিয়ে বললো.
আহারে কত বড় হয়ে গেছে বাবু আমার চা দিয়ে বিস্কুট খাবো.
হ্যা আমি ওই এলিফ্যান্ট আঁকা বিস্কুট খাবো.
আচ্ছা সাথে মিল্ক তো?
না মিল্ক খাবো না.
তাহলে আজকে কার্টুন ও চলবেনা.
এই বলে কোলে করে ওকে টয়লেটে নিয়ে গেল.
সিমরন জানে আজও রোজ সকালের মতো ওকে ভিজতে হবে, দুষ্টুটা ব্রাশ করার পরে, মুখের সমস্ত জল মায়ের গায়ে কুলকুচি করে ফেলে দেয়, আর খিল খিল করে হাসে. কি মজা যে হয় ওর, মাকে ভিজিয়ে দিতে. এই শুরু হলো সকাল থেকে, সারাদিন মা আর ছেলের এই চললো.সূর্যর আজকে একটু দেরিতে ঘুম ভাঙ্গলো. কাল চিন্তা করতে করতে প্রায় রাত ভোর হয়ে গেছিলো.
আজকে ফোন করে সবাইকে বলে দেবে যে আজ আর কোনো মিটিং এ যাবেনা, বেলা করে একবার পার্টি অফিস যাবে.
বাড়ির বারান্দায় খবরের কাগজ নিয়ে বসলো. সিমরনও সূর্যর এরকম ঢিমে তাল দেখে জিজ্ঞেস করলো. তোমার শরীর ঠিক আছে তো?
সূর্য গম্ভিরভাবে ওকে জবাব দিলো ” তুমি কি আমার শরীর খারাপ হতে দেবে কোনদিন? ভালো মন্দ খাইয়ে তো তন্দুরস্থ রেখেছো”
এরকম কড়ক অভ্যর্থনা পেয়ে সিমরনের মন খুব খারাপ হয়ে গেল। তবু সাহস করে বলেই ফেললো ” আজ থেকে যাওনা খুব তো চাপ যাচ্ছে তোমার দেখছি”
সূর্য গম্ভিরভাবে ওকে জবাব দিলো “সিমরন তুমকো একদিন বাতায়া কে ম্যায় কিতনা পড়েশান হু আজকাল। ফিরভি তুম মুঝে আকেলা নেহি ছোরতে হো। তকলিফ কিয়া হ্যায় তুমহারি?”
সিমরনের চোখে প্রায় জল এসে গেল, ঝাপসা চোখ হারিয়ে গেল এক মধুর স্মৃতিতে।
এইরকমই একটা বিরল দিন সিমরনের জীবনে, যেদিন ও সূর্যকে অনুরোধ করেছিলো বাড়িতে থেকে যেতে।
সেদিন সিমরনের অনুরোধ শুনে সূর্য উঠে গিয়ে মিউজিক প্লেয়ার চালিয়ে দিয়ে এলো, লতা মঙ্গেশকরের বিখ্যাত গান “বাঁহো মে চলে আ”
সূর্য একহাত দিয়ে সিমরনকে টেনে নিজের কাছে টেনে নিয়েছিলো সেদিন, বিয়ের পর প্রথম প্রথম ছাড়া, বহুদিন সেও এই সুন্দরী যুবতী স্ত্রীর শরীর ছুয়ে দেখেনি, মনটা হু হু করে উঠলো. নরম শরীরের উষ্ণতা ছড়িয়ে সিমরন হুমড়ি খেয়ে সূর্যর কোলেই বসে পরলো. চশমাটা খুলে রেখে সূর্য বৌএর কোমর জড়িয়ে ধরে আরো জোর করে ওর কোলে বসিয়ে দিলো. সিমরনের খুব লজ্জা লাগছিলো, তবুও কেন যেন উঠতে ইচ্ছে করছিল না. এই চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে মরলেও যেন কত শান্তি. কি গভীর এই চাহুনি, যেন সিমরনের মনের ভিতরটা পরে ফেলছে. বহুদিন পরে এত কাছাকাছি এলো দুটো শরীর সাথে দুজনের মন।
“বহুত ফুরসত সে বানায়া রব নে তুঝে.” সূর্য বলে উঠলো আসতে আসতে সিমরনের কানে কানে. আর হাতের উল্টো দিক দিয়ে সিমরনের গালে আসতে আসতে বুলাতে শুরু করলো.ভালো করে সিমরনকে দেখলো, যেন প্রথম দেখছে. সত্যি কি সুন্দর এই বড় বড় টানা টানা চোখ দুটো. পান পাতার মতো মুখের আদল, তুলি দিয়ে আঁকা যেন রক্তিম ঠোঁটদুটো. ইষৎ কোকড়ানো চুলের ভেজা ভেজা সরু কযেকটি দড়ির মত কুঁচি ওর মুখের ওপর এসে পড়েছে. সূর্য আসতে আসতে শিল্পীর মতো আঙ্গুল দিয়ে চুলের কুঁচিগুলোকে ঠিক করে দিয়ে ওর ঠোঁট ওর বিয়ে করা বৌএর ঠোঁটের স্বাদ নিতে শুরু করলো। (বার বার সিমরন না লিখে এখন থেকে সিমি বলে লিখছি) সিমির নিস্বাস প্রস্বাস দ্রুত হচ্ছিলো, হাপরের মত তার বুক ওঠা নামা করছিলো। যখন দুটো মুখ দম নেওয়ার জন্যে ঠোঁটের বাধন শিথিল করলো তখন সিমির ঠোঁট রক্তবর্ণ ধারন করেছে। সূর্য সিমির কপালে চুমু খেয়ে সিমিকে ওর বলিষ্ঠ দুটো হাতে তুলে নিয়ে চুমু খেতে খেতে বেডরুমে নিয়ে গেল। আর যেন তর সয়না, হুমড়ি খেয়ে তুলতুলে বিছানায় গিয়ে পরেছিল দুজন.
ধীর গতিতে নিখুত ভাবে সিমির সারা শরীরে সূর্য চুমু একে দিলো. ধনুকের মত বেঁকে বেঁকে গিয়ে সীমি এই ভালবাসার পুরুষকে প্রশ্রয় দিয়ে চললো আর সহ্য করতে থাকলো নিদারুন এই অনুভূতি, যা সূর্য তার জিভ দিয়ে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ শিরা উপশিরায় আগুনের মতো ছড়িয়ে দিলো. দড়ির মত পাক খেতে থাকলো তার স্থিতিস্থাপক নরম তুলতুলে শরীরটা. আসতে আসতে দুচোখ আবার এক হলো. সীমি চোখ ভরে দেখলো সূর্যর চোখে, সুখে চোখ বুজে আসছে তার তবুও বড় বড় চোখের পাতা খুলে সূর্যর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো. কিছু কম পাচ্ছেনা তো সূর্য. সুখের আবেশে সূর্যর চোখ আধবোজা, সিমির শরীরে তার দীর্ঘ সুঠাম পুরুষদণ্ডটি সুখের খোজে ক্রমাগত খুড়ে চলেছে তন্বি মেয়েটার দেহ। থর থর করে কাপছে সিমির স্ফিত স্তন যেন একতাল জেলি রাখা আছে, নাকের পাঁটা ফুলে ফুলে উঠছে সিমির, অধরোষ্ঠ ঈষৎ ফাঁক হয়ে দীর্ঘ দীর্ঘ নিঃশ্বাসের সাথে সুখের শীৎকার বেরিয়ে আসছে। সূর্যর ঠোঁট মাঝে মাঝে এসে সেই রক্তবর্ণ অধরোষ্ঠ সুধা পান করছে। কখনো গলার তলে, কখনো ঘারে, কখণো সিমির বুকে সূর্যর ঠোঁটের স্পর্শ সিমিকে সুখের সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে। বলিষ্ঠ পেশিবহুল দুটো হাত সিমির শরীরের দুধারে সূর্যর শরিরের ভর রেখেছে। মিউজিক সিস্টেমে মৃদু আওয়াজে বেজে চলেছে “ ইয়ে কাহা আ গইয়ে হাম, তেরি সাথ সাথ চলতে চলতে”।
চওড়া সেই লোমহীন পেশিবহুল বুকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে পদ্ম পাতায় শিশির বিন্দুর মত। সিমি হাত দিয়ে মুছে দিচ্ছে বার বার ওই শিশিরবিন্দু গুলো। ভালবাসার পুরুষের কোন কষ্টই যেন তার সহ্য হয়না। আর নিজের সংযম ধরে রাখতে পারলো না, সিমির এইরকম মুহূর্তেও মন থেকে যায়না যে এই লোকটার অসীম দয়ায় সে আজ এখানে, তাই নিজেকে মেলে ধরতে পারেনা, কিন্তু সে কার্পণ্যও করেনা। আজ এই মুহূর্তে সিমির সব সংযম ভেঙ্গে গেলো। সুগঠিত, দুধে আলতা,নরম দুই হাত দিয়ে স্বামির গলা জরিয়ে ধরলো। ধিরে ধিরে সময়ের সাথে সাথে দুই পাও স্বামির কোমরে বের দিয়ে ধরলো, সিমি যেন আজ ভেসে যেতে চায়। সুখের সাগরে ডুবে যেতে যেতে আচমকা এক ধাক্কায় সম্বিত ফিরে এল।রাজ এসে মাকে ডাকছে “চলনা দেখনা টিভিতে কার্টুন হচ্ছে না”
সীমি সম্বিত ফিরে পেয়ে নিজের মনেই লজ্জা পেয়ে গেলো. “ইস দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি ভাবছি”.
ঘুরে একবার সূর্যর মুখের দিকে তাকালো. কেমন যেন লাগছে ওকে, না আচড়ানো চুলগুলো প্রায় চোখের ওপর এসে পড়েছে, স্বচ্ছ চশমার কাছের মধ্যে দিয়ে আনমনা চোখ দুটো ভয়ংকর লাগছে. আজকে ওকে দেখে কেমন ভয় ভয় লাগছে. কেন?
“চলোনা” রাজ আবার তাড়া দিলো.
সীমি ঘরে গিয়ে দেখল টিভিতে নিউস চলছে ছেলেকে বললো ” বাবা এখন তো আর কার্টুন হবেনা” এখন খবর চলবে এক ঘন্টা. তুমি ততক্ষণ একটু সাইকেল রাইড করে নাও.
বাহাদুর এসে হাজির, বাজারে যাবে বলে. রাজকে খুব ভালবাসে, ওর রাজের মতো এক নাতি আছে দেরাদুনে.
সীমি ওকে বাজার বুঝিয়ে দিলো.
রাজ বললো ” আপ আনেকে টাইম পে মেরে লিয়ে এক প্যাকেট ক্যাডবেরি লেকে আনা”.
সীমি আর বাহাদুর হেসে উঠলো. রোজই বাহদুর কে কিছু না কিছু আনতে হয় রাজের জন্যে.
বহুদিনের লোক বাহাদুর এই বাড়ির. ফাইফরমাশ সব করে. সূর্যর বাবার আমল থেকে ও আছে এখানে. রাজ হওয়ার পরে ও খুসিতে মহল্লার সবাইকে আলাদা করে মিষ্টি খাইয়েছিল.
সিমিকেও ভাবি মা বলে ডাকে. মাঝে মাঝে রাজকে বাংলোর ভিতরের বিভিন্য গাছে চড়িয়ে দেয়. রাজ কে কাঁধে করে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় এই বিশাল বাংলোর মধ্যে. দোলনা চড়ানো থেকে নাগরদোলা চড়ানো ওই করে সিমির পরে.
সূর্যও ভীষণ বিশ্বাস করে ওকে. কয়েকবার এই বাড়ির সামনে জনগনের বিক্ষোভ হয়, সেই সময় বাহাদুরই বাইরের লোককে ঠেকিয়ে রেখেছিলো.
বাজার বুঝে নিয়ে বাহাদুর চলে যায়. রাজ সাইকেল নিয়ে ঘরময় ঘরে বেড়াতে থাকে. সীমি সেই ফাঁকে নিচে নেমে বাকি কাজের লোকদের কাজকর্ম দেখতে থাকে.
কিছুক্ষণ পরে যথারীতি রাজের চিত্কার মাকে দেখতে না পেয়ে. আবার হুরমুরিয়ে ওপরে চলে যায়. কিন্তু কাজের লোকগুলোকে ছার দেওয়া যায়না. তাই রাজ কে নিয়ে সাইকেল নিয়ে নিচে নেমে এলো সীমি. রাজকে চার দেওয়ালের মধ্যে সাইকেল চালাতে বলে ও ঘুরে ফিরে কাজের দেখ্ব্ভাল করতে করতে একবার এসে বাগানের মধ্যে শ্বেত পাথরের বেঞ্চটাতে এসে বসলো.
এখান থেকে সূর্য কে দেখা যাচ্ছে,
কপালের দুধার থেকে চুল অর্ধবৃত্তের মত করে ওর চোখ দুটো ঢেকে দিয়েছে. কার সাথে ফোনে কথা বলছে যেন. ভীষণ ক্রুর দেখাচ্ছে ওকে এই মুহুর্তে. সিমির মনে কেমন যেন কু ডাক দিচ্ছে.